বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনঃসূচনা – একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধ্যান্ত

২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের পুনঃসূচনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও ঐতিহাসিক বিভাজনের পর, উভয় দেশ কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনাপূর্ণ ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে এই সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে। তবে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়ছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের নবযাত্রা
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মুহাম্মদ ইউনুস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, এরপর ডিসেম্বর মাসে কায়রোতে D-8 সম্মেলনের সাইডলাইনে তাদের দ্বিতীয় বৈঠক হয়। এই বৈঠকে উভয় নেতা বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৭১ সালের বিষয়গুলোর সমাধানের আহ্বান জানান, যার জবাবে শাহবাজ শরিফ বলেন, “যদি কোনো বাকি বিষয় থাকে, তাহলে আমরা সেগুলো বিবেচনা করতে প্রস্তুত”
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগীতা
উভয় দেশ বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ রেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ গঠনের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান থেকে খেজুর ও সাইট্রাস ফলের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। উভয় দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
সামরিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে:
উচ্চ পর্যায়ের সামরিক সফর: বাংলাদেশের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস. এম. কামরুল হাসান পাকিস্তান সফর করেন এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন । Study IQ Education
বাংলাদেশের নৌবাহিনী পাকিস্তানের বার্ষিক “Aman” নৌ মহড়ায় অংশগ্রহণ করে, যা দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে । উভয় দেশ শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা ও ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি শুরু হয়েছে । উভয় দেশ ভিসা নীতিতে শিথিলতা এনে ব্যবসা, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সহজ করেছে ।
ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসতে পারে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়নে ভারত উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে ।